আরও ৩৩ বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করতে বরাদ্দ বাজেটে

আরও ৩৩ বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করতে বরাদ্দ বাজেটে

জাতীয় সংসদে ২০২১-২২ অর্থবছরে প্রস্তাবিত বাজেটে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের জন্য ২৭ হাজার ৪৮৪ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া প্রস্তাব করা হয়েছে। দেশে আরও ৩৩টি বিদ্যুৎকেন্দ্র ও একটি এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণের জন্য এই বরাদ্দে প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।

বৃহস্পতিবার বিকাল ৩টায় অর্থমন্ত্রী তার বাজেট প্রস্তাবে এ বরাদ্দের কথা জানান।  প্রস্তাবিত এই বরাদ্দ বিদায়ী অর্থবছরের চেয়ে ৭২৬ কোটি টাকা বেশি। ২০২০-২১ অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দ ছিল ২৬ হাজার ৭৫৮ কোটি টাকা।

অর্থমন্ত্রী তার বাজেট বক্তব্যে জানান, ৬৫০ মেগাওয়াট ক্ষমতার ছয়টি বিদ্যুৎকেন্দ্রের দরপত্র প্রক্রিয়াধীন আছে। তিনি বলেন, ১৫ হাজার ১৯ মেগাওয়াট ক্ষমতার ৩৩টি বিদ্যুৎকেন্দ্র পরিকল্পনাধীন রয়েছে। সরকারের কঠোর পদক্ষেপের কারণে বিদ্যুতের সিস্টেম লস ১৪ দশমিক ৩৩ শতাংশ হতে কমে ৮ দশমিক ৭৩ শতাংশ হয়েছে।

মুস্তফা কামাল বলেন, সরকারের দূরদর্শী ও সময়োপযোগী পদক্ষেপের কারণে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে দেশে বিগত ১২ বছরে অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জিত হয়েছে। ২০০৯ সালের তুলনায় বর্তমানে ৫ গুণ বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদিত হচ্ছে। দেশে মোট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা (ক্যাপটিভ ও নবায়নযোগ্য জ্বালানিসহ) ২৫ হাজার ২২৭ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে।

অর্থমন্ত্রী তার বাজেট বক্তব্যে উৎপাদন, সঞ্চালন ও বিতরণ ব্যবস্থার সমন্বিত উন্নয়ন নিশ্চিত করে প্রধানমন্ত্রীর অঙ্গীকার ‘ঘরে-ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়ার’ কার্যক্রম বাস্তবায়নের ফলে দেশের মোট জনসংখ্যার শতকরা ৯৯ ভাগকে বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় আনা সম্ভব হয়েছে বলে উল্লেখ করেন।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান বিদ্যুৎ চাহিদা মেটাতে ১৪ হাজার ১১৫ মেগাওয়াট ক্ষমতার ৩৮টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণাধীন রয়েছে এবং ২ হাজার ৯৬১ মেগাওয়াট ক্ষমতার ২০টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের চুক্তি সই করা হয়েছে। বিদ্যুৎ খাতে নেওয়া মেগা প্রকল্পগুলোর মধ্যে রামপাল কয়লাভিত্তিক মৈত্রী সুপার থার্মাল বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্প, মাতারবাড়ি আল্ট্রাসুপার ক্রিটিকাল বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্প এবং রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্প তৈরির কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলেছে বলে জানান অর্থমন্ত্রী।

অর্থমন্ত্রী বলেন, পায়রা ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট থার্মাল বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ শেষে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয়েছে। বর্তমানে নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে ৭২২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদিত হচ্ছে। প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নের মাধ্যমে দেশে বিদ্যুতের সঞ্চালন ও সরবরাহের ক্ষেত্রে ক্রমবর্ধমান চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হবে বলেও মনে করেন তিনি।

জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করার বিষয়টি তুলে ধরে অর্থমন্ত্রী তার বাজেট বক্তব্যে বলেন, আমাদের জ্বালানির মোট চাহিদার একটি বড় অংশ প্রাকৃতিক গ্যাসের মাধ্যমে পূরণ হয়ে থাকে। দেশে আবিষ্কৃত ২৭টি গ্যাসক্ষেত্রের মধ্যে বর্তমানে ২০টি উৎপাদনে রয়েছে। ২০০৯ সালে বাংলাদেশে প্রাকৃতিক গ্যাসের উৎপাদন ছিল ১ হাজার ৭৪৪ মিলিয়ন ঘনফুট, যা বর্তমানে বেড়ে প্রায় ২ হাজার ৫২৫ মিলিয়ন ঘনফুটে দাঁড়িয়েছে। প্রাকৃতিক গ্যাসের মোট চাহিদার অবশিষ্ট অংশ এলএনজি হিসেবে আমদানি করে জাতীয় গ্রিডে যুক্ত করা হচ্ছে বলে জানান মুস্তফা কামাল।

অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কামাল বলেন, কক্সবাজার জেলার মহেশখালীতে ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট করে মোট ১ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট ক্ষমতার দুটি ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল স্থাপন করা হয়েছে। আমদানি করা এলএনজি ভাসমান টার্মিনালের মাধ্যমে পুনরায় গ্যাসে রূপান্তর করে দৈনিক গড়ে ৬০০ থেকে ৭০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যুক্ত করা হচ্ছে। এলএনজি সরবরাহ বাড়ানোর জন্য কক্সবাজারের মাতারবাড়িতে দৈনিক ১ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট ক্ষমতার ল্যান্ড-বেইজড এলএনজি টার্মিনাল স্থাপনে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। জ্বালানি নিরাপত্তা বাড়ানো ও সুসংহত করতে সরকার জ্বালানি তেলের মজুদ বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে বলেও জানান অর্থমন্ত্রী।

আপনি আরও পড়তে পারেন